আফরোজা খান রিতা স্বনামখ্যাত আলোকিত নারী ব্যক্তিত্ব

বাংলাদেশ

দেশের কৃতী ও সফল নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে যাঁদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁদের মাঝে আফরোজা খান রিতা এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি নারীদের কল্যাণে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। নারী জাতির জন্ম শুধু ঘরে বসে থাকার জন্যে নয়; নারীরাও যে তাদের মেধা, শ্রম এবং প্রজ্ঞা দিয়ে সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন তার বড় প্রমাণ আফরোজা খান রিতা। দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই আফরোজা খান রিতা’র পদচারণা রয়েছে। এই সব অঙ্গনে আসার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তাঁর মরহুম পিতা সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশীদ খান মুন্নু। তিনি স্বনামখ্যাত ‘মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা। আফরোজা খান রিতা ছোট বেলা থেকেই দেখেছেন তাঁর পিতা কেমন করে নিজ মেধা এবং চিন্তার বিকাশে ধীরে ধীরে একটি প্রতিষ্ঠানকে বিশাল করে তুলেছেন। এত কাছ থেকে পিতাকে দেখে তিনিও বাবার মতো বড় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনিও একজন বড় মাপের শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক হতে পেরেছেন। আফরোজা খান রিতা ইতোমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ‘মুন্নু সিরামিক’-এর পণ্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। কোয়ালিটির কারণে বিশ্ববাজারেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে এই পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি ও বাজারজাত করা হয়। তাই ব্যবসায়িক কাজের স্বার্থে আফরোজা খান রিতা’র বিদেশ ভ্রমণের প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এ সুবাদে অর্জন করেছেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা যা তিনি দেশে ফিরে নিজেদের শিল্প এবং ব্যবসার কাজে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য। আফরোজা খান রিতা শৈশব থেকেই প্রখর মেধার অধিকারী। তিনি ১৯৭৮ সালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৮০ সালে একই বোর্ডে মেধা তালিকায় অষ্টম স্থানের অধিকারী হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম অনার্স এবং ১৯৮৫ সালে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

আফরোজা খান রিতা বর্তমানে মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তিনি ২০০১ সাল থেকে এই দায়িত্ব পালন করছেন। মুন্নু গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে— মুন্নু ফেব্রিক্স লিমিটেড, মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন্নু জুটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন্নু জুট স্ট্যাপলারস লিমিটেড, মুন্নু গ্রিমিক্সপেল লিমিটেড, রশিদ ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড। এই সবক’টি প্রতিষ্ঠানেরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করছেন আফরোজা খান রিতা। সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। তিনি ২০০২ সাল থেকে জিয়া-শিশু কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আফরোজা খান রিতা মানিকগঞ্জের মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তিনি হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নে নিজস্ব অর্থায়নে ৪.১১ একর জায়গার ওপর ‘রিতা আবাসন প্রকল্প’ স্থাপনের মাধ্যমে ১০০টি ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। উপলব্ধি করেছেন একটি জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা; তাই বলড়া ইউনিয়নে নিজস্ব অর্থায়নে ‘রিতা মডেল হাই স্কুল স্থাপনের মধ্য দিয়ে অসচ্ছল ছেলে-মেয়েদের মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়াও বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত অর্থায়নে উন্নয়ন কার্যক্রম, মেয়েদের শিক্ষা সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা সম্প্রসারণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে একাধিক স্কুলে কম্পিউটার দিয়েছেন।

তিনি হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায় বহু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং মন্দিরের উন্নয়নের জন্যে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ প্রদান করেছেন। হরিরামপুর ও শিবালয়ের অনেক রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদির অবকাঠামো নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও মেরামতের ব্যাপারে সরকারের সাথে সমন্বয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া, শিবালয় এবং হরিরামপুরের ৩৬টি ইউনিয়নে বহুসংখ্যক গ্রামে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তিনি মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের বিনা খরচে বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। অসচ্ছল ও দুস্থ পুরুষ-মহিলাদের রিকশা ও সেলাই মেশিন প্রদানের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আফরোজা খান রিতা হরিরামপুরের ফিরোজা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পদচারণা ব্যাপক; তিনি মনে করেন দেশের মানুষের জন্যে কিছু করতে হলে রাজনীতির মাধ্যমেই তা সম্ভব। এ ছাড়া তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন তাঁর পিতা স্বনামখ্যাত হারুনার রশীদ খান মুন্নু রাজনীতির মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা প্রদান করেছেন; তাই তিনি পিতার অনুপ্রেরণাতেই রাজনৈতিক অঙ্গনেও ভূমিকা রেখেছেন। আফরোজা খান রিতা ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৭৩ মানিকগঞ্জ-২ (শিবালয়-হরিরামপুর) এবং ১৭৪ মানিকগঞ্জ-৩ (সদর-সাটুরিয়া) নির্বাচনী এলাকায় চারদলীয় জোট সমর্থিত বিএনপি প্রার্থী হারুনার রশীদ খান-এর সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে মতবিনিময় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেছেন। হারুনার রশীদ খান মুন্নু রাজনীতিতে আসার অনেক আগেই মানিকগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে অর্জন করেন মানুষের ভালোবাসা; এ সুবাদে ওই এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবেসে এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। তেমনি আফরোজা খান রিতাও মরহুম পিতার আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে মানিকগঞ্জের উন্নয়নে ভূমিকা ও অবদান রেখে চলেছেন। অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক