আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন :লায়ন শাহ নেওয়াজ

বাংলাদেশ সর্বশেষ

বিশ্বের ক্ষমতাধর ও শিল্পোন্নত আমেরিকায় অবস্থান করে যে সকল বাংলাদেশি আমেরিকান প্রিয় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সংস্কৃতিকে বেগবান করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন লায়ন শাহ নেওয়াজ এমবিএ তাদেরই একজন। তিনি গ্লোবাল এনআরবি চেম্বার অব কমার্স-এর প্রেসিডেন্ট এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ড-এর সম্মানিত উপদেষ্টা। এছাড়া তিনি ‘সাপ্তাহিক আজকাল’ পত্রিকার এডিটর ও পাবলিশার; এনওয়াই কার অ্যান্ড লিমো সার্ভিসেস ইনক, এনওয়াই ইন্স্যুরেন্স ব্রোকারেজ ইনক, গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইনক, কেরিয়ার একাডেমি অব নিউ ইয়র্ক ইনক (এইচএইচএ/ পিসিএ এইড ট্রেনিং স্কুল), পারফেক্ট এজ এডাল্ট ডে কেয়ার ইনক, নিউ ইয়র্ক বাংলা টিভি ইনক (এনবি টিভি), উইকলি ইত্তেফাক ইনক, শাহ নেওয়াজ ব্রোকারেজ ইনক, এস এস আর আর প্রোপার্টিজ ইনক-এর প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও। জনাব শাহ নেওয়াজ নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বৃহত্তর বাংলাদেশি আমেরিকান বিজনেস এনটাইটেলস অব জ্যাকসন হাইটস-এর ব্যবসায়িক সংগঠন JBBA -এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লায়ন শাহ নেওয়াজ আসন্ন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে ডিস্ট্রিক্ট লিডার (অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ’২৪) পদে নির্বাচন করছেন। তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশ জনপ্রিয়। দেশি-বিদেশি আমেরিকানরা তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। লায়ন শাহ নেওয়াজ একদিকে যেমন উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী তেমনই একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক, প্রিন্ট অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, একজন ফিলানথ্রপিস্ট, একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং বাংলাদেশি আমেরিকানদের উন্নয়নে নিবেদিত সৃজনশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

এই কৃতী ব্যক্তিত্ব ছোটবেলা থেকেই ছাত্র হিসেবে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। একই সাথে খেলাধুলা এবং গানবাজনাসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অঙ্গনে বিচরণ করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আত্মপ্রত্যয়ী লায়ন শাহ নেওয়াজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেই উন্নয়নের কারিগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম হন।
খেলাধুলা এবং প্রাচ্যের শিকড়-ঘনিষ্ঠ মিউজিকের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ। তিনি এসব ক্ষেত্রেও ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি তাঁর ব্যবসায়িক এবং সামাজিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাংলা ভাষা ছাড়াও ৬টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। লায়ন শাহ নেওয়াজ একজন পরোপকারী ব্যক্তিত্ব; নিউ ইয়র্কে তিনি ‘বন্ধু’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। সাত দিনের ২৪ ঘন্টাই তিনি মানুষের উপকারে নিয়োজিত থাকেন। যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে ডাকলেই তাঁকে কাছে পাওয়া যায়। মানুষের সমস্যা সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। আমেরিকান এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেকার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে তিনি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

লায়ন শাহ নেওয়াজ একজন নীরব সমাজ উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব। প্রচারবিমুখ এই মানুষটি বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয়দের সামাজিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়নে নীরবেই কাজ করছেন। এক্ষেত্রে তিনি নিউ ইয়র্কের একজন কেন্দ্রীয় চরিত্র যাঁর নেতৃত্বে প্রচুর উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী যেমন ব্যবসায়িকভাবে সহযোগিতা লাভ করেছেন তেমনি কমিউনিটিও উপকৃত হচ্ছে। তাঁর হাত দিয়ে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই সমাজ উন্নয়নকর্মী বরাবরই সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তা স্বর্গের চেয়েও আনন্দময় হবে। তিনি বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। রেড ক্রিসেন্টের সাথেও তাঁর রয়েছে গভীর সম্পর্ক। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে তিনি একাধিকবার রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দেশে আসেন এবং রোহিঙ্গা ত্রাণ শিবিরে সহযোগিতা প্রদান করেন। তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের জন্য গৃহীত এই উদ্যোগ বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী, সমাজকর্মে নিবেদিত লায়ন শাহ নেওয়াজ ‘অর্থকণ্ঠ’ প্রতিনিধিকে সম্প্রতি দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যা বলেন- তা এখানে উপস্থাপন করা হলো :


অর্থকণ্ঠ : আপনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে রয়েছেন। বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কি ভাবে দেখছেন?
শাহ নেওয়াজ : বর্তমান বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশেষ করে আমরা যারা আমেরিকায় রয়েছি তারা অনেক আনন্দিত। আমেরিকায় থাকলেও বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, আমাদের শিকড়। এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এবং ‘ভিক্ষুকের দেশ’ বলে তাচ্ছিল্য করা হতো। কোথাও বাংলাদেশের নাম বললে আমাদের সম্মানের সাথে দেখতো না। সৌদি আরবের শেখরা পর্যন্ত বাংলাদেশকে ‘মিসকিন’-এর দেশ বলে অভিহিত করতো। সেই বাংলাদেশ এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অর্থনীতি দিন দিন মজবুত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নকামী দেশের লাইন থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠে এসেছি। বাংলাদেশ মধ্যম আয় এবং উন্নত দেশে পরিণত হবার পথে এগিয়ে চলেছে। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল পেতে শুরু করেছেন দেশের জনগণ। পৃথিবীর যে কোনো দেশের মানুষ এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত।


অর্থকণ্ঠ : দেশের এই উন্নয়নের পেছনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কতটুকু ভূমিকা রাখছেন বলে আপনি মনে করেন?
শাহ নেওয়াজ : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এক সময় দরিদ্র ও হতদরিদ্র ছিল। স্বাধীনতার আগে এদেশের প্রায় ৮০ ভাগ লোক ছিল দরিদ্র। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এদেশের মানুষ অনাহার-অর্ধাহারে থেকেছেন; এমন কি না খেতে পেয়ে মৃত্যুর মুখেও পতিত হতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৮০ ডলারেরও কম। এখন মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলারের বেশি। দারিদ্র্যের হার নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশে। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতুর মতো বড় স্থাপনা নির্মাণ করেছি।
প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছেন। দেশে বেশক’টি এনআরবি ব্যাংক হয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি। এমন কি করোনাকালেও প্রবাসীদের রেমিট্যান্সই দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে রেমিট্যান্স প্রেরণের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে।

অর্থকণ্ঠ : প্রবাসী উদ্যোক্তা- ব্যবসায়ীদেরও ‘সিআইপি’ সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে। আপনার অভিমত কি?
শাহ নেওয়াজ : এটি অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। বর্তমানে দেশের ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রবাসে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন দেশে এখন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে একদিকে যেমন দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখছেন, তেমনই রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। তাদের অবশ্যই উপযুক্ত সম্মান পাওয়া উচিত। সরকার প্রবাসী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মূল্যায়ন করায় আমরা অনেক খুশি।
অর্থকণ্ঠ : আপনি গ্লোবাল এনআরবি চেম্বার অব কমার্স-এর প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি এনআরবি ওয়ার্ল্ড-এর অ্যাডভাইজর। এর আগে নিউ ইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি আমেরিকান বৃহত্তম বাণিজ্য সংগঠন ঔইইঅ- এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আপনি একজন আলোকিত বাংলাদেশি আমেরিকান। একজন সঙ্গীতজ্ঞ আপনি এবং লায়নিজম আন্দোলনের সাথেও সম্পৃক্ত। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও সংস্কৃতির বিকাশে আপনারা কতটা ভূমিকা রাখছেন?
শাহ নেওয়াজ : আমেরিকার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে যোগ্যতার স্বীকৃতি। যে কোনো দেশের নাগরিকের এদেশে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেকেই তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ লাভ করেন। পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে লাভ করেন সকল সুযোগ-সুবিধা। আছে আইন ও বিচার বিভাগের সুষ্ঠু শাসন। এটাই আমেরিকার মূল সৌন্দর্য। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরাও এখানে দিন দিন যোগ্যতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, অধ্যাপনা ও গবেষণায় স্থান করে নিচ্ছেন। মূলধারার রাজনীতিতেও বাংলাদেশিরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা যারা বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য গড়ে তোলা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত- আমাদের কমিউনিটির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি জেবিবিএ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে জ্যাকসন হাইটসসহ কুইন্স, ব্রুকলিন এবং ম্যানহাটনের ২০ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং নিজেদের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পরস্পরকে নানাভাবে সহায়তা করে থাকি।
বাংলাদেশি আমেরিকানরা এখন সচেতন, ঐক্যবদ্ধ এবং নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রেখে বাংলাদেশের শিকড় সত্তাকে জাগরুক রাখছেন। আমরা যেমন আমেরিকান- তেমনই বাংলাদেশেরও সন্তান। স্বাভাবিকভাবেই বহুজাতির সংমিশ্রণের এই আমেরিকায় আমরা নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সমুজ্জ্বলভাবে তুলে ধরে নিজেদের স্বকীয় সত্তা বাংলাদেশি হিসেবে উপস্থাপন করছি। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ।

অর্থকণ্ঠ : আপনারা বাংলাদেশের কালচারকে কিভাবে উপস্থাপন করছেন?
শাহ নেওয়াজ : আমি মনে করি, বাংলাদেশ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অতি সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র। প্রবাসী নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছুই অবগত নয়। আমরা তাই মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ,পহেলা ফাল্গুন এসব দিবস ঘটা করে পালন করি। আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সন্তানরাসহ বিদেশিরাও এসব দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারে। পৃথিবীতে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে ভাষার মর্যাদা রাখতে হয়েছে। অবশ্য ভারতের আসামের অহমিয়ারাও ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছেন। তারা আমাদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ভাষার আন্দোলনে নেমেছিলেন। এছাড়া আমাদের প্রাচ্যের যে সংগীতধারা- লালন, হাছন রাজা, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া এসব গানের চর্চাও চলছে। এখানে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেখানে সংস্কৃতি চর্চা এবং প্রতিযোগিতা হয়। এতে শুধু বাংলাদেশিরাই নয়- অন্যান্য দেশের মানুষও আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে।
অর্থকণ্ঠ : আপনি নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশি আমেরিকান লায়নস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে আপনারা কি কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?
শাহ নেওয়াজ : লায়নস ক্লাবের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যকার বন্ধুত্ব, পরিচিতি ও সামাজিক সম্পর্ককে যেমন গভীর করছি, তেমনি এখানকার সমাজে যারা পিছিয়ে আছেন যাদের সমস্যা রয়েছে সে সব সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারছি। আমরা প্রাকৃতিকসহ বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে শীতবস্ত্র ও ত্রাণ নিয়ে দুস্থদের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে থাকি। আমরা রক্ত সংগ্রহ করে তা উপকারভোগীদের প্রদান করছি।
অর্থকণ্ঠ : সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আপনাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইছি।
শাহ নেওয়াজ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়। আমেরিকা এবং বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। একসময় দেখা যেত আমেরিকাসহ কোথাও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে ঢালাওভাবে তার দোষ চাপানো হতো ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের উপর। আশার কথা, এখন এই প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। সন্ত্রাসী যেই হোক আমরা তাদের ঘৃণা করি। আমরা বিদেশিদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। প্রকৃত অর্থে মুসলমানরা সন্ত্রাসী দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়- ব্যক্তিবিশেষ কেউ কেউ হতে পারে। এজন্য মুসলিম সমাজকে ঢালাওভাবে দোষ দেয়া ঠিক নয়। সন্ত্রাসীদের অবস্থান সব ধর্মের লোকদের মধ্যেই আছে।
আমি একজন অ্যান্টি-টেরোরিস্ট ক্যাম্পেইন অ্যাক্টিভিস্ট। ইউএসএ অ্যাম্বেসির জুলহাস মান্নান বাংলাদেশে হত্যার শিকার হলে আমি অন্যায়কারীর যাতে শাস্তি হয় এজন্য তৎপর হয়েছিলাম। আমি ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (WHRD) এর মাধ্যমে জোরদার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম ফলে এর যথার্থ বিচার হয়েছে।
অর্থকণ্ঠ : আপনি নিশ্চয়ই জানেন, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর ভয়ানক অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। আপনারা এ ব্যাপারে কি ভূমিকা রাখছেন?
শাহ নেওয়াজ : মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক রোহিঙ্গাদের উপর অমানবিক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ তাদের নিঃশেষ করে দেওয়া এবং দেশ থেকে বিতাড়নের ঘটনা পৃথিবীর জঘন্যতম ইতিহাসের একটি। বিশ্বে স্বৈরাচারী ও অন্যায়কারী সরকার ও সামরিক জান্তা কর্তৃক যে সকল নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এটি তার মধ্যে অন্যতম। ১১ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি হারিয়ে, স্বজন হারিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে। এজন্য বিশ্ব বিবেক বাংলাদেশকে অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখছে। বিশ্বের কাছে মানবিক একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা সম্মানিত হচ্ছেন- এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
আমি হিউম্যান রাইটস-এর একজন কর্মী হিসেবে রোহিঙ্গাদের উপর অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার দাবি করে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছি; পাশাপাশি নিউ ইয়র্ক থেকে টিম নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় তাদের জন্য বিভিন্ন রকম ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়েছি। আমি চাই, বিশ্ববিবেক রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের উপর চাপ জোরদার করুক।

অর্থকণ্ঠ : আপনি প্রতিবন্ধীদের জন্যেও কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইছি।
শাহ নেওয়াজ : দেখুন, সৃষ্টিকর্তা এই গ্রহে মানবিক মূল্যবোধকেও প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। যে কারণে মানুষের মধ্যে অসুস্থ, শারীরিকভাবে অক্ষম-পঙ্গু-প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করার লক্ষে ‘ASHA’ এবং South Asian Organization of Disables এসব সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে বিশ্বের দেশে দেশে সেবা দিয়ে আসছি। এটি আমার জীবনে অন্যরকম আনন্দ অনুভূতি হিসেবে অনুপ্রাণিত করছে। আমি মনে করি, মানুষ মানুষের জন্য। প্রতিবন্ধীরাও আমাদের সমাজের অংশ। তাদের সেবা ও সহায়তা করা উচিত।
অর্থকণ্ঠ : আপনি আমেরিকার মূলধারার সাথে বাংলাদেশি আমেরিকানদের যোগসূত্র গভীর করার ক্ষেত্রে দূতের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আপনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিপুল ভোট পেয়ে অফিসিয়ালি নির্বাচিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনারা কি কি কাজ করছেন?
শাহ নেওয়াজ : আমেরিকায় নানা দেশের বিভিন্ন ভাষার এবং বিভিন্ন ধর্ম-গোত্রের লোক বসবাস করেন। আমরা বাংলাদেশিরা বলতে গেলে আমেরিকান মূল সোসাইটিতে বেশ পিছিয়েই ছিলাম; এখন অবশ্য এই অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে মূলধারার সাথে আমাদের কমিউনিটিকে নানাভাবে সংযুক্ত করার সুবাদে। আমরা এখানে প্রতিনিধি নির্বাচনে কংগ্রেসম্যান এবং সিনেট সদস্য নির্বাচনে, কাউন্সিলম্যান নির্বাচনে, স্টেট সিনেটরস নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। তাদের সাথে আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করছি। আমাদের চাহিদা তারা বাস্তবায়ন করছেন। বিশেষ করে কংগ্রেসম্যান Joshep Crowly, Yvette D. Clarke, সিনেটর Jose Prealta, কাউন্সিলম্যান Daniel Domn, Queens Brorongh, President Melinda Katz, Assemblyman David Neprin আমাদের কমিউনিটির উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। আমরাও তাদের নির্বাচন এবং অর্থ সংগ্রহে ভূমিকা রাখছি।
অর্থকণ্ঠ : কি ধরনের কাজে আপনার আনন্দ বেশি?
শাহ নেওয়াজ : নিউ ইয়র্কের গৃহহীন মানুষ, তাদের সন্তান এবং বাংলাদেশেরও দুস্থ পরিবারকে প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, শিশুদের খেলনা, বইসহ অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে পারলে আত্মতৃপ্তি পাই, বেঁচে থাকার আনন্দ অনুভব করি। আমি মনে করি, যাদের সম্পদ ও সামর্থ্য আছে তাদের প্রত্যেকেরই এমন ভূমিকা রাখা উচিত।
অর্থকণ্ঠ : আপনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথেও সম্পৃক্ত। গানের ভুবনের কোন গানগুলো আপনাকে বেশি আমোদিত করে?
শাহ নেওয়াজ : আবহমান বাংলার যে গান মানুষের মনে নাড়া দেয়, যে গান আমাদের মূল সংস্কৃতির বিশেষ করে পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, লালন গীতি, হাছন রাজার গানসহ গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা হাজারো বাউলের গান কখনো পুরনো হয় না। বারবার ফিরে আসে। এ ছাড়া আধুনিক গান ও পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে সাযুজ্য রেখে আমাদের নতুন ধারার গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্বের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম সম্পদ।