Nurul Azim

বাংলাদেশিদের উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য : নূরুল আজিম

বাংলাদেশ সর্বশেষ

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনামুল হক এনাম

প্রবাসে যে সব বাংলাদেশি তরুণ নিজেদের সফল কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রশংসিত হবার গৌরব বহন করছেন তাদেরই একজন বাংলাদেশি আমেরিকান নূরুল আজিম। দেশের কক্সবাজার সমুদ্রপাড়ের এই তরুণ নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশিদের আত্মার আত্মীয়। যেখানেই বাংলাদেশিরা সেখানেই এই কর্মচঞ্চল সুদর্শন নূরুল আজিম। তিনি শুধু সমাজসেবা আর বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখেননি, একজন সফল উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর ব্যবসা। তিনি নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ইনভেস্টর ইনক-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রোপ্রাইটর। এছাড়াও প্রাইভেট অকশনের বাড়ি, পাবলিক বাড়ি, ব্যাংক মালিকানা বাড়ি, শর্টসেল ও অব ই ও প্রপার্টি ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমেও যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছেন। ব্যবসা ক্ষেত্রে তাঁর দার্শনিকতা এমন যে, তিনি পরিদর্শন করেন, পর্যবেক্ষণ করেন এবং ক্রয়-বিক্রয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অর্থাৎ কথার চেয়ে কাজকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ফলে এক্ষেত্রে তাঁর একটি উন্নত ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির যে কোনো ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং ইভেন্টসমূহে তাঁর সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি সর্বজনবিদিত। ফলে এই তরুণকালেই তিনি জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছেন। দেখা যায়, ফোবানা কনভেনশন থেকে শুরু করে শো-টাইম মিউজিকের ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড’ ছাড়াও বনভোজন, পথমেলাসহ যে কোনো অনুষ্ঠানের অভিষেক এমনকি পবিত্র রজমান মাসে আয়োজিত বিভিন্ন সামাজিক ইফতার ও দোয়া মাহফিলেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন। নূরুল আজিম একজন রুচিশীল মনের মানুষ। তাঁর ধোপ-দুরস্ত আধুনিক পোশাক বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নয়ন ভাবমূর্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিদেশিরা উপলব্ধি করতে পারে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ নয়- এদেশটি এখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সামিল। নূরুল আজিম ছাত্র হিসেবেও মেধাবী ছিলেন। তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্ক থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি আমেরিকায় ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে জড়িত। সফল উদ্যোক্তা ও সামাজিক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের গর্ব নূরুল আজিম অর্থকণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বলেন, তা এখানে উপস্থাপন করা হলো :

অর্থকণ্ঠ : আপনি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটির এক আলোকিত ও সুপরিচিত মুখ। এখানকার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও মধ্যমনি হিসেবেই আপনাকে দেখা যায়; এর পেছনে কোন বিষয়টি কাজ করে?
নূরুল আজিম : আমেরিকা হচ্ছে বিশ্বের সকল মানুষের দেশ। এখানে যদি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা যায় সেই ঢেউ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই দোলা দেবে। আমি মনে করি, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে উপস্থাপনের সুযোগ পাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ তখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অন্য এক উচ্চতায় মূল্যায়ন করে। এতে বাংলাদেশি হিসেবে আমরা গর্বিত হবার সুযোগ পাই। অন্যদিকে বাংলাদেশের যারা আত্মীয়- স্বজন থেকে দূরে এসে প্রবাসে বাস করছি তারা নিজেরাই একটা ‘আত্মীয় গোষ্ঠী’। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আমেরিকায় এক খণ্ড বাংলাদেশকে পাই। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়, একজন আরেকজনকে চিনতে পারি, বুঝতে পারি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা সুন্দর ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়। তারা এখানে বসেই বাংলাদেশকে অনুভব করতে পারে।

অর্থকণ্ঠ : আপনি জানেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে। এ মুহূর্তে দেশ সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কি?
নূরুল আজিম : একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার অহঙ্কার ও গর্বের শেষ নেই। আমি এমন একটি দেশের সন্তান যে দেশটি কারো দয়ার দানে নয়, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে। আমি গর্বিত ১৯৭১ সালে পৃথিবীর দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করেছেন। আমাদের স্বাধীনতা-প্রেমী বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলতে গেলে শুধু মনের জোরে প্রতিপক্ষের চেয়ে দুর্বল অস্ত্র নিয়েই তাদের পরাজিত করে রক্ত সবুজ পতাকা ওড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এই যুদ্ধে আমরা ৩০ লক্ষ মানুষকে হারিয়েছি, দুই লাখের অধিক মা-বোন তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। আমাদের দেশকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা জ্বালিয়ে গুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাঁর ডাকে মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাঁর নেতৃত্বেই আবার বাংলাদেশ নতুন প্রত্যয়ে গড়ে উঠতে থাকে। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানান, আমার ডাকে তোমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছো, কিন্তু দায়িত্ব শেষ হয়নি; এখন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে শুরু হয়েছিল দেশ গঠনের নতুন আন্দোলন-সংগ্রাম। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা উন্নত বাংলাদেশ অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে পৃথিবীর উন্নত দেশের মানুষেরাও এখন সমীহ করে। তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে- বাংলাদেশের মানুষ সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে সামনের দিকে এগোতে জানে। আমরা সত্যিই গর্বিত, উৎফুল্ল আমাদের এই বিজয়ে।

অর্থকণ্ঠ : আপনি বাংলাদেশিদের কৃষ্টি-কালচারের একজন অগ্রণী সৈনিক। যেখানেই সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সেখানেই আপনাকে সামনের সারিতে দেখা যায়; এর পেছনে কি কারণ?
নূরুল আজিম : দেখুন বাংলাদেশ ৫৩ বছর ধরে স্বাধীন হলেও আমাদের জাতির রয়েছে কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। আমাদের সংস্কৃতি পৃথিবীর অনেক পুরানো সংস্কৃতি। আপনাদের নিশ্চয় স্মরণ আছে, বাংলাদেশের সেই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্যে তৎকালীন পাকিস্তানের সরকার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ করেছিল। তারা বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ করেছিল। তারা বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদের পলিসি ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করা হলে আস্তে আস্তে বাঙালিরা আর বাংলা ভাষার চর্চা করবে না, অফিস-আদালতে বাংলা ভাষা গুরুত্ব হারিয়ে ফেললে বাঙালিরা অফিসিয়াল কাজের জন্যেই উর্দু শিখতে থাকবে; এভাবেই লোপ পাবে বাংলা ভাষা, তাদের তখন শাসন শোষণ করা আরো সহজ হবে। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে তাদের সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। তাঁরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করেছিল। সেই ২১ ফেব্রুয়ারির সাহসের ধারা অনুসরণ করেই আমাদের জীবনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, আমরা বিজয়ী হয়েছি। সেই একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু এখন বাংলাদেশের মাতৃভাষা দিবস নয়, সারা বিশ্বের মাতৃভাষা দিবস। এটা আমাদের জন্যে অনেক সম্মানের, অনেক গর্বের। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের কালচার সম্পর্কে, আমাদের দেশের ভাষা সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্বের শত শত দেশ জানে। সেই দেশের সন্তান হিসেবে আমি বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারকে তুলে ধরার চেষ্টা করি; আমার খুব ভালো লাগে।
অর্থকণ্ঠ : আপনার মতে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে লালন ও ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অর্থাৎ আপনারা কি ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন?
নূরুল আজিম : বাংলাদেশের মানুষ এখন পৃথিবীর সর্বত্র বিরাজমান। প্রায় সোয়া কোটি বাংলাদেশি দেশ ছেড়ে প্রবাসে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লাখ লাখ মানুষ আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া ও ইউরোপিয়ান দেশসমূহে স্থায়ী বসবাস করছেন এবং সে সব দেশে ‘এক খণ্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। আগেই বলেছি, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনেক প্রাচীন। এই সংস্কৃতিই আমাদের বাংলাদেশকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছে।
আমাদের যেমন লোকসংস্কৃতি আছে, তেমনই আছে বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মডার্ন কালচার। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছি তারা এখন পাশ্চাত্যে বাস করলেও নিজেদের সংস্কৃৃতিকেই লালন করে। আমি মনে করি, এই চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
আমরা নিউ ইয়র্কসহ আমেরিকায় আমাদের জাতীয় দিবসসমূহ যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, ঈদ উৎসব ইত্যাদি ঘটা করে পালন করি। তবে সংস্কৃতিতো অনেক গভীর উপলব্ধির বিষয়; সে জন্যে আমাদের লোকসংস্কৃতিসহ দেশজ সংস্কৃতির অন্যান্য ধারাকে বেগবান করার জন্যে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার, যাতে নতুন প্রজন্ম সেই সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পায়।

অর্থকন্ঠ : নিউ ইয়র্কে যেখানেই বাংলাদেশিরা সেখানেই আপনার উপস্থিতি; এই সংযোগের পেছনে কোন বিষয়টি কাজ করে?
নূরুল আজিম : আমরা আমেরিকায় বাস করলেও বাঙালির শিকড় সত্তা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে যারাই এসেছেন তারা আমার আত্মার আত্মীয়। আমি মনে করি, এখানে আমরা যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই প্রথমেই প্রয়োজন ঐক্য। একটা কমিউনিটিতে সবাই সমানভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। অনেকেই নানাবিধ সমস্যার মধ্যে থাকেন। কমিউনিটির মধ্যে যারা ভালো আছেন তাদের উচিত পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা করা, তাদেরও আর্থিক ও শিক্ষার দিক থেকে এগিয়ে আনা। তাদের স্বাস্থ্য সেবায় সহযোগিতা করা। আমি মনে-প্রাণে চাই, এখানকার বাংলাদেশিরা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের সমস্যাসমূহ দূর করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষ বাংলাদেশিদের এই উন্নয়ন দেখে তারাও তা অনুসরণ করবে। আমি বরাবরই বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করে ঢলেছি। আমি আশাবাদী নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে সক্ষম হবো।
অর্থকণ্ঠ : আপনি যথেষ্ট পোশাক সচেতন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উন্নত ধরনের স্মার্ট পোশাকে আপনাকে দেখা যায়
নূরুল আজিম : আমি একটি বিষয় বিশ্বাস করি যে, পোশাক মানুষের পরিচয়ের গণ্ডিকে সমৃদ্ধ করে। ধরুন, আপনি একটি অনুষ্ঠানে সুন্দর পোশাক পরে উপস্থিত হলেন- দেখবেন, সবারই কৌতূহল হবে আপনি কে- কি আপনার পরিচিতি! তখন সেই পরিচয়ের সাথে আপনার দেশের নামটাও উচ্চারিত হবে। আর তখন শুধু আপনার সম্পর্কে নয়, দেশ সম্পর্কেও তাদের কৌতূহল সৃষ্টি হবে সেই দেশকে তারা সম্মান করবে। তবে আমি তথাকথিত উচ্ছৃঙ্খল পোশাককে ঘৃণা করি- আমাদের দেশের সকল পোশাকই শালীন। সেই পোশাকগুলোকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারলে একদিন দেখা যবে বিদেশিরাও আমাদের ডিজাইনের শার্ট-প্যান্ট, পাজামা-পাঞ্জাবি, শাড়ি পরে পুলকিত বোধ করবে।
অর্থকণ্ঠ : বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষন জানতে চাইছি।
নূরুল আজিম : বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আবহমান বাংলার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, আধুনিক বাড়িঘর গড়ে উঠছে। বাজার হচ্ছে, ছোট ছোট শিল্প-কারখানার বিস্তৃতি ঘটছে। আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের বিস্তৃতিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশের নারীরাও এখন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন। আবার এনজিওদের কার্যক্রমের ফলে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ সচ্ছলতা লাভ করেছেন। নারীরা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। এতে করে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে যা বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আর ডিজিটাল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে এবং চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। অশিক্ষিত বা কমশিক্ষিত একজন নারীও ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তারাও এখন দেশের উন্নয়নের অংশীদার। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়েও তারা দক্ষ হয়ে উঠছেন। একজন কৃষকও গ্রামে বসে শহরের মার্কেট সম্পর্কে জানতে পারছেন। গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরাও বাজারে নিজেদের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারছেন। আমি মনে করি, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বংলাদেশ অচিরেই উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে সক্ষম হবে।
অর্থকণ্ঠ : আপনি উন্নয়নের কথা বলছেন, কিন্তু দেশে অনিয়ম-দুর্নীতিও চলছে। আপনার পরামর্শ কি?
নূরুল আজিম : একটি দেশে যখন উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় তখন এর সাথে অর্থনীতি জড়িত থাকে। আর যেখানে অর্থ আছে সেখানে দুর্নীতি হবারও আশঙ্কা থাকে। আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি; আরো বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুসহ দেশে রাস্তা এবং সড়ক সংস্কারের মাধ্যমে ৪ লেন, ৬ লেন মহাসড়ক- দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে আমি মনে করি, দুর্নীতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। যে কোনোভাবেই হোক দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। সরকারকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে হবে।
অর্থকণ্ঠ : আপনি বাংলাদেশের অহঙ্কার বিশ্ব ঐতিহ্যের কক্সবাজারের সন্তান। কক্সবাজারকে কিভাবে সাজালে আরও পর্যটক আকৃষ্ট হবে বলে মনে করেন?
নূরুল আজিম : মানুষ ভ্রমণ-পিয়াসী। আমাদের দেশে প্রচুর পর্যটন স্পট আছে। বিশ্বের মধ্যে ‘কক্সবাজার’ একটা অন্যরকম আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। পর্যটকরা চান নিরাপত্তা এবং চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা; কক্সবাজারকে নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে আনতে হবে। উন্নত থাকার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। শুধু ফাইভ স্টার হোটেল চালু করলেই হবে না, মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে ভালো থাকার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থা হতে হবে সুন্দর। যানজট পর্যটকদের ভ্রমণে অনুৎসাহিত করে। শুধু কক্সবাজার নয়- সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটাসহ সিলেটেরও অনেক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান রয়েছে। ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ের অপার সৌন্দর্যও মানুষকে মুগ্ধ করে। আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়, নওগাঁর পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার, সোনারগাঁও বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক গ্রহণীয়। এসব বিষয় বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।

অর্থকণ্ঠ : প্রত্যেক মানুষেরই স্বপ্ন থাকে। আপনার স্বপ্ন কি?
নূরুল আজিম : বাংলাদেশের সন্তান আমি। কর্ম ও বর্তমান ঠিকানা এবং নাগরিকত্ব সুবাদে আমি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। আমেরিকা আমার বাসস্থান। আমি যেমন বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত, তেমনই আমেরিকার নাগরিক হিসেবেও গর্ববোধ করি। আমার দুটো স্বপ্ন- এক. প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের উন্নয়ন। বাংলাদেশ যত উন্নত হবে, আমি তত বেশি আনন্দিত হবো; কারণ আমাদের আত্মীয়-পরিজন দেশেই রয়েছেন। তারা সেই উন্নয়নের ছোঁয়া পাবেন। ভালো থাকার সুযোগ পাবেন।
আর একজন আমেরিকান বাংলাদেশি হিসেবে আমি আমাদের বাংলাদেশ কমিউনিটির মানুষদের সার্বিক উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। এখানে অনেকেই বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে আছে- কেউ কর্মসংস্থানের দিক থেকে, কেউ আবার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিষয়েও। আমি তাদের এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করতে আগ্রহী। আমি মনে করি, আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যত বেশি উন্নত জীবন যাপন করতে পারবেন আমার তত বেশি আনন্দ হবে। কারণ এদেশে বাংলাদেশিরা ভালো থাকলে বিশ্বের বুকে এ দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।
আমি সবসময়ই আত্মস্থ করি- ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। এই আত্মদর্শন আমাকে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে অনুপ্রেরণা যোগায়।
অর্থকন্ঠ : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইছি-
নূরুল আজিম : আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ একই পরিকল্পনা, তা হলো- দেশ ও দেশের মানুষের জন্যে কাজ করা। তা তিনি দেশেই থাকুন আর আমেরিকাতেই থাকুন। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সমস্যা সমাধানে ও উন্নয়নে কাজ করে যাবো। আমি চাই উন্নত বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর সকল স্থানেই বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনযাত্রা।