মাহবুব সিরাজ তুহিন সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক

প্রবাসী

অস্ট্রেলিয়া ডে অ্যাওয়ার্ড ২০২১ পেলেন এডিলেইডের জনপ্রিয় কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাহবুব সিরাজ তুহিন। যারা পরিবার প্রিয়জন ফেলে জীবিকার টানে দেশের বাইরে এসেছেন, তারা জানেন অচেনা দেশে অচেনা ভাষায় অচেনা সংস্কৃতিতে ঠাঁই করে নেওয়া কত কষ্টকর। এভাবে বাইরে এসে মানুষ কত মানবিক বেদনা ও মর্মান্তিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, তার খবর যারা ভুক্তভোগী তারাই বলতে পারবেন। অনেকেই হয়ত সময়ের সাথে সংগ্রাম করে এই অবস্থা থেকে উত্তীর্ণ হন, ভালো একটা অবস্থায় পৌঁছান। কিন্তু পৌঁছেই আবার তাদের স্ট্রাগলের ইতিহাস ভুলে যান অথবা নিজের উন্নতিতেই ব্যস্ত থাকেন।

মাহবুব সিরাজ তুহিন এ দিক দিয়ে বিরল ব্যতিক্রম। তিনি দীর্ঘ এক যুগ ধরে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক হয়ে আছেন। গত এগারো বছর ধরে তিনি বাঙালিদের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য ও সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন- হোক সেটা চাকুরি নিয়ে পরামর্শ, চাকুরির জন্য প্রয়োজনীয় ভলান্টারি কাজের ব্যবস্থা, ক্যারিয়ার নিয়ে ওয়ার্কশপ, অথবা নতুন আসা শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের আবাসনে সাহায্য করা। তিনি এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ জনকে চাকুরি অথবা ভলান্টারি কাজ জুগিয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।

এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মাহবুব সিরাজ তুহিন বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন। এই যেমন কমিউনিটিতে অবদান রাখার জন্য সিটি অব ওয়েস্ট টরেন্স থেকে অস্ট্রেলিয়া ডে অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অর্জন করলেন। শুধু যদি এই করোনা মহামারির সময় কমিউনিটির জন্য তিনি কি করেছেন তার বিবরণ দেওয়া যায়, তা হলেও পরিষ্কার হয়ে যায় যে পুরস্কারটি ভুল হাতে যায়নি।
কোভিডে অনেকেই যখন চাকুরি হারাচ্ছেন, তখনও তিনি ভাবছেন কি করা যায়! অস্ট্রেলিয়ায় তো রেফারেন্স ছাড়া কাজই পাওয়া যায় না। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে রেফারেন্স দিয়েছেন, চাকুরিদাতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করেছেন। চাকুরিপ্রার্থীকে সম্ভাব্য চাকুরিদাতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। অন্তত ৬০ জন করোনা মহামারিকালে তার রেফারেন্সেই চাকুরি বা ভলান্টারি কাজ পেয়েছেন।

এছাড়াও তিনি ‘এডিলেইড কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি সাপোর্ট গ্রুপ’ তৈরি করেছেন, যার এখন সদস্য সংখ্যা ৬৫২ জন। এই গ্রুপের মাধ্যমে তিনি কমিউনিটির মানুষজনকে করোনা থেকে নিরাপদে থাকার কৌশলগুলো শেখানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন, কোভিড-১৯ মার্শাল ট্রেইনিং-এ লোকজনকে যুক্ত হতে উৎসাহিত করেছেন। কোভিড ঝড়ের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন টেম্পোরারি রেসিডেন্সে থাকা লোকজন ও ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা। তিনি ব্যক্তিগত দাতাদের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করে টেম্পোরারি রেসিডেন্স স্টেটাসে থাকা লোকজন ও ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের প্রত্যেকের জন্য ৫০ ডলারের গ্রোসারি ভাউচার বণ্টনের ব্যবস্থা করেছেন। রেস্টুরেন্ট মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে কোভিড ভিক্টিমদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। কমিউনিটির রোগপ্রতিরোধ বাড়াতে ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে দান করতে আগ্রহী কৃষকদের কাছ থেকে সবজি আনিয়েছেন এবং গ্রোসারি শপের মাধ্যমে বিনামূল্যে মানুষের মধ্যে বিলি করেছেন। এই গ্রুপের মাধ্যমেই জনাব তুহিন ভলান্টিয়ার ডাক্তারদের তালিকা করেন এবং কমিউনিটির লোকজন যাতে নিজের ভাষায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পান তা নিশ্চিত করেছেন।

করোনা মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ান সরকার বিভিন্ন রকম নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে, যার মধ্যে কিউ আর কোডের ব্যবস্থা করা ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মসূচিও ছিল। যারা ভাষা ও প্রযুক্তিগত বাধার কারণে এগুলো করতে পারছিল না এমন অন্তত ৫০টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটির অনুষ্ঠানের আয়োজকদের এই কাজগুলোতে তিনি সাহায্য করেছেন।

মাহবুব সিরাজ তুহিন বেশক’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। তিনি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব জাস্টিসের সদস্য এবং গত সাত বছর ধরে তিনি জাস্টিস অব পিস-এর ভূমিকা পালন করছেন।
সেইসাথে তিনি সাউথ অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের (SABCA) সাবেক চেয়ারপারসন ও বর্তমান উপদেষ্টা। সোসাইটি ফর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর জেনারেল।
এই জনহিতৈষী কাজের বাইরে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথেও যুক্ত, যার সুফল পুরো কমিউনিটিই পায়। যেমন, তিনি ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে চলেছেন, ক্যারিয়ার পার্টনার অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশিরা চাকুরি পেয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি এভারগো এর ডিরেক্টর, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও মাহবুব সিরাজ তুহিন হোল্ডফাস্ট ও জেলা জাস্টিস গ্রুপের ডেপুটি চেয়ার পারসন এবং Aus & Nz, Curlware.com-এর সিইও।
তুহিন যে বাংলাদেশিদের স্বার্থেই কাজ করছেন- এমন নয়। তিনি ফুডব্যাংক এসএ (Foodbank SA) ও বুশফায়ার ভিক্টিমদের জন্য ফান্ড রেইজার হিসেবে কাজ করেছেন।
মাহবুব সিরাজ তুহিন ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশনের (WBO) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, সংগঠনটির অস্ট্রেলিয়ান চ্যাপ্টারের কোঅরডিনেটর তিনি। Mahbub Siraz Tuhin is Vice President of NRB World. NRB World representing NRB Worldwide.