Sabur Khan

বর্তমান সরকারের নিকট প্রত্যাশা সুশাসনের : ড. মো. সবুর খান

বাংলাদেশ মতামত সর্বশেষ

দেশ-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষাখাতে অসামান্য অবদান রাখা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ড. মো. সবুর খান। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল পরিবারের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিরও (এপিইউবি) চেয়ারম্যান। ১৯৯০ সালে তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স নামে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের প্রথমদিকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা ২০০২ সালে দেশের প্রথম পাবলিক লিস্টেড আইটি কোম্পানি হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড বাংলাদেশের আইসিটি খাতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক স্থাপন করে এবং দ্রুত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব কম্পিউটার ব্র্যান্ড ‘ড্যাফোডিল পিসি’ চালু করে এবং দেশের প্রথম ক্লোন পিসি অ্যাসেম্বলিং কোম্পানি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে, যা বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও গর্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।
১৯৯৬-৯৭ সালে যখন বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এনআইআইটি, এপটেক) বাংলাদেশের বাজারে একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে তখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি (DIIT) দেশীয় প্রযুক্তিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি (DIIT) বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয় এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে বাংলাদেশের মেধা ও প্রতিভাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছে। ড. মো. সবুর খানের নেতৃত্বে ড্যাফোডিল পরিবার বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি এবং বিনিয়োগ খাতের মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত, যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৫,০০০ জনের বেশি লোক কর্মরত আছেন। মো. সবুর খান ১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে চাঁদপুর জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাখাতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং ভারতের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট, ডি লিট এবং ভিজিটিং প্রফেসরশিপ অর্জন করেছেন।

ড. মো. সবুর খান ২০০২-২০০৩ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁরই বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ২০০২ সালে দেশে পৃথক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। তিনি ২০০৪-২০০৬ মেয়াদে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক এবং ২০১২ সালে ডিসিসিআই-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস ফোরামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের (উইটসা) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে তিনি অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এইউএপি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. মো. সবুর খান সম্প্রতি অর্থকণ্ঠকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যা বলেন তা এখানে উপস্থাপন করা হলো :

অর্থকণ্ঠ : গত ১৬ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা তথা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে তারুণ্যের বিপ্লব। এই বিজয়কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. মো. সবুর খান : প্রথম হচ্ছে গত ১৬ বছরে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলি এটা কমপ্লিটলি ঠিক না। শাসনব্যবস্থা ১৯৭১ সালের পর থেকে কোন সরকার কিন্তু ধারাবাহিকভাবে পারফেক্টলি করছে তা হয়তো না। কেউ হয়তো চেষ্টা করছে, কিন্তু আমি বলবো পারে নাই। তবে এই জায়গাটায় কিন্তু সমস্যা ছিল। প্রকৃত অর্থে শাসন ব্যবস্থা বলতে আমরা বুঝি গুড গভর্নেন্স বা সুশাসনকে বুঝি। মানুষ সত্যিকার অর্থে আইনের শাসন আশা করে। এককথায় বিচার পাবো। বিচারপতিদের আমরা খুবই সম্মান করি ও এটি একটি সম্মানীয় পদ। কিন্তু আজ জনগণ কেন তাদের বিরুদ্ধে? একই ভাবে যারা রাষ্ট্রব্যবস্থায় ছিল, রাষ্ট্রনায়ক ছিল তারা কেন এভাবে চলে যাবে? যারা মন্ত্রী পদে ছিল কেন তারা চলে যাবে? এটা কিন্তু রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত। কেন অশনি সংকেত, কারণ যারা ভালো মানুষ তারা কিন্তু ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। কেন রাজনীতিতে আসতে চাইবে না! তারা ভাববে আজ আমি ভালো আছি, সামনে ভালো থাকবো না। তাহলে এই জায়গায় বলবো ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিজয়কে আমি মূল্যায়ন করতে চাই আমদের প্রকৃত অর্থে শিখতে হবে। আমরা মুখে বলবো শিখবো। কিন্তু বাস্তবে প্রতিফলিত হবে না, তা না। আমাদের শিখে কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ নিতে হবে। যখন কেউ ভালো কাজ করবে, তখন তারা উৎসাহ দিবে। কেউ খারাপ কাজ করলে, একতাবদ্ধভাবে মতামত নিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।

অর্থকণ্ঠ : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই অরাজনৈতিক সরকারের কাছে গণমানুষের প্রায়োরিটিভিত্তিক কি কি প্রত্যাশা হওয়া উচিত?
ড. মো. সবুর খান : প্রথম আমাদের মাথায় রাখতে হবে প্রায় ৫৪ বছর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ৫৪ বছরে আমরা দেখেছি একটি পক্ষ যখন ক্ষমতায় থাকতো তখন অন্যগোষ্ঠীকে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করতো এবং এটা একটা অসুস্থ রাজনীতি ছিল। এই রাজনীতি ১৯৯৬ সালে শুরু হয়। তবে ১৯৯৬ সালে ব্যাপকহারে হয়নি। এরপর ২০০১ সালে একটু হলো এবং এরপরে ২০০৮ এর নির্বাচনের পরে ২০০৯ সালে ব্যাপকহারে হলো। আমি বলবো না যে আগে কেউ করেনি। আগেও করেছে। আগে ছিল অল্প এরপর আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বেড়েছে। এখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। তাকে কিন্তু পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। আমি ৫৪ বছর কথা বলতে পারি নাই, রাজপথে নামতে পারি নাই, একত্রিত হই নাই। মাত্র একটা সরকার ক্ষমতায় আসলো। ভঙ্গুর অবস্থায়, কোনো অবকাঠামোগত ফরমেট নাই, সারাদেশের থানাসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা বিতর্কিত। সমস্ত কিছু যখন বিতর্কিত, সেই অবস্থায় একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সবকিছু বিবেচনা করার জন্য যদি বলা হয় তাহলে কোনো কিছু করা সম্ভব না। একটা সময় সেই সরকারও ব্যর্থ হবে। আগে তাকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সুশাসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিচার ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। যখন কেউ বিচার চাইবে সে যেন বিচার পায়। সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একটা লোক অন্যায় করবে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ঘায়েল করবে। এটা যেন এদেশে না হয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া কাজের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে। যেমন একজন ট্রাফিক যে কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করে সে যেন তার উপযুক্ত সম্মানী পায়। তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সে নিজেকে অবৈধ উপার্জন করা থেকে বিরত রাখতে পারবে। সারাবিশ্বে যেমন ট্রাফিকরা জরিমানার একটা নির্দিষ্ট অংশ ইনসেনটিভ পায় তেমন ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এখানে মাথায় রাখতে হবে সেই সুযোগে যেন অন্যায় না করা হয়। করলে তারও শাস্তি হতে হবে। এখানে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সৎ সাহস থাকতে হবে। জবাবদিহিতা থাকলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজতর হবে। অন্তর্বর্তী সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং ভালো মানুষের মূল্যায়ন করবে। সঠিক মানুষকে সঠিক জায়গায় বসাতে না পারলে কখনও পরিবর্তন সম্ভব না।

অর্থকণ্ঠ : রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি দ্রুত নির্বাচন দিক সরকার, কিন্তু গণমানুষ চায় বর্তমান ধারার রাজনীতির অবসান। আপনার মতামত জানতে চাইছি।
ড. মো. সবুর খান : ৫৪ বছর ধরে প্রমাণ হচ্ছে। সবাই কিন্তু ক্ষমতায় ছিল। কেউ এককভাবে, আবার কেউ জোটগতভাবে। প্রত্যেকে কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। তারা কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কি চায়? তারা দেশটাকে ভালো দেখতে চায়। আমরা কিন্তু বলছি দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। দেশের টাকা কখনো পাচার হবে না যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়। রাজনৈতিক দলসমূহ এবং জনসাধারণকে সময় দিতে হবে যে আপনারা দেশে আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। নতুবা আবার পূর্বের মতো হবে। আমাকে নিশ্চয়তা দিতে হবে ফেয়ার নির্বাচনের। প্রতিবেশী ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার মতো সর্বজনীন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নরেন্দ্র মোদি অনেক চেষ্টা করেও কিন্তু নির্বাচনে কারচুপি করতে পারেনি। ব্রিটেনেও পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক চেষ্টা করেও কিন্তু পারে নাই। বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের দাবি থাকবে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে যেন রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারে একটু সময় দেয়। তারা অন্তত এই জায়গায় সরকারকে সহায়তা করুক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়। এই সরকারকে যথেষ্ট সময় না দিলে মনে করবো তারা শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়।

অর্থকণ্ঠ : দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্র ও অপরাজনীতির ধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক অবকাঠামো দরকার, যার মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনীতির আত্মপ্রকাশ ঘটবে- এই জন্য বর্তমান সরকারকে কতদিন সময় দেয়া দরকার?
ড. মো. সবুর খান : বর্তমান সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্র ও অপরাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সরকারকে এটাও দেখতে হবে ঘুষ ও অন্যান্য অনিয়ম থেকে আমরা বের হতে পেরেছি কিনা। এখানে আমাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে তার সামাজিক ও পারিবারিক খরচ মিটাতে উপযুক্ত বেতন দিতে হবে। নতুবা রাষ্ট্র দুর্নীতি জিরো টলারেন্স, স্বজনপ্রীতি হতে বের হয়ে আসতে পারবে না। পরিবারতন্ত্র ও অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, পলিসি পরিবর্তন করতে হবে। এমনকি সরকারকে দেখতে হবে জনগণ যে গণতন্ত্র চাই সেটা আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা। আসলে কি ঘুষ প্রথা বিলুপ্ত হচ্ছে? ঘুষ প্রথা বিলুপ্তের পর আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যারা এর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল তারা সঠিক মূল্যায়িত হচ্ছে কিনা। একটা লোক কম বেতন পাচ্ছে। অপর পক্ষে সম্পদের অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। একজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণের দায় রাষ্ট্র কোনোভাবে এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা যথোপযুক্ত বেতন পায় না, না পাওয়ার জন্য রাষ্ট্র দায়ী। দুর্নীতি অনেক সময় মানুষ শখে করে না। পারিবারিক ও সামাজিক ব্যয়ভার ও মর্যাদা রক্ষায় এ অসদুপায় পন্থা অবলম্বন করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দুর্নীতিবাজদের একটি বড় অংশ ধর্মকর্ম করে। একটি সরকার তার রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্ত সংস্থা বা অধিদপ্তরকে দলীয়করণ করেছে। পুলিশ ও আর্মিকেও তারা দলীয়করণ করেছে। তারপরও তারা টিকতে পারেনি। এতে প্রমাণিত হয়- জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এই বিষয়গুলো থেকে বের হওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় থাকতে হবে। সেটা তিন মাস-ছয় মাস কিংবা এক, দুই কিংবা তিন বছর হতে পারে। মোটাদাগে একটি নির্দিষ্ট সময় হতে হবে। উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে বসাতে হবে। একটা সময় বিরোধী দলে যারা ছিল তারা কিন্তু নির্যাতিত, নিপীড়িত ছিল। মামলার ভারে তারা ছিল ন্যূব্জ। এখন তারা রাজনীতি করতে পারছে। তাদেরও মাথায় রাখতে হবে কোনো প্রকার জোড়াতালি দিয়ে সরকার গঠন করলে তাদের পরিণামও যে এমন হবে না তার কিন্তু নিশ্চয়তা নেই। এই বিষয়গুলো শনাক্ত করতে পারলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ। ১৯৫২-তে আন্দোলন ছিল ভাষার জন্য কিন্তু এবারের আন্দোলন সুশাসনের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার আঘাত করেছে, গুলি করেছে। তাদের ব্যাঙ্গার্থক ভাষায় কথা বলেছে। তারপর এক দফা আন্দোলন করেছে যেটা চার দিনে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে- সরকার গঠন করে চাঁদাবাজি করলাম তা কিন্তু মেনে নিবে না। তখন আপনার বিরুদ্ধে যাবে। এক কথায় অপরাজনীতি দূর করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো গবেষণা নেই। নেতা নির্বাচনে কোনো গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করা হয় না। যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার ও মাইকিং এবং অর্থের বিনিময়ে কিছু লোকসমাগম দেখিয়ে নেতা নির্বাচন করা হয়। এতে জনগণের ভোগান্তি ছাড়া অন্যকিছু হয় না। এসব হলো অপরাজনীতি। রাজনীতি হবে জনগণের জন্য। কিছু লোক সমাগম দেখিয়ে নেতা নির্বাচনের পন্থা পরিহার করে চরিত্র ও নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন লোক নির্বাচন করে নেতা নির্বাচন করতে হবে। বিগত সরকারের সময় দেখা গিয়েছে যে কোনো সভা-সমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আজ তো সেসবের হদিস নেই। আমরা এই মেকি রাজনীতি থেকে পরিত্রাণ চাই।

অর্থকণ্ঠ : বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক প্রতিকূল বাস্তবতা। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে আপনার পরামর্শ বলবেন কি?
ড. মো. সবুর খান : বাংলাদেশের অর্থনীতির এই প্রতিকূল অবস্থা হতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রথমে অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে কারা ঋণ নিয়েছে তাদের শনাক্ত করা। তারা কোনো না কোনো মাধ্যম হতে টাকা নিয়ে গেছে। হয়তো কোনো কোম্পানি বা ব্যাংকের মাধ্যমে। কোম্পানির কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। টাকা দেশে রয়েছে নাকি বিদেশে নিয়ে গেছে? সেটা অনুসন্ধান করতে হবে। বিদেশে নিয়ে গেলে কোথায় নিয়ে গেছে? সেটা সঠিকভাবে নিয়ে গেছে কিনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়েছে কিনা, সেটা অনুসন্ধান করতে হবে। ঢালাওভাবে সবাইকে পাচারকারী বলা যাবে না।
আমি যেমন বুক ফুলিয়ে বলতে পারি ঋণখেলাপি নই। এখানে মাথায় রাখতে হবে অনেকে পরিস্থিতির শিকার হয়ে ঋণখেলাপি। করোনার সময় যারা সার্ভিসভিত্তিক ব্যবসায়ী তারা কিন্তু কিছুই করতে পারে নাই। তাদেরকে ভর্তুকি দিতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে সুযোগ দিতে হবে। তবে যারা টেকনিক করে সরকারের নিকট হতে ব্যাংকগুলো খালি করেছে তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের সঙ্গে কথা বলে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে। তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে হবে আপনি বা আপনারা টাকাগুলো ফেরৎ দিন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হবে না। অপরদিকে উন্নয়নমূলক কাজগুলো হতে যারা অর্থ লুট করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা সরকারের তোষামোদি করে অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এরা শুধু অর্থনীতি নয়, পুরো জাতিকে দুর্বল করেছে। কারণ ঋণের অংশ মাথাপিছু সবার ঘাড়ে বার্তায়। আমাদের অর্থনীতিকে সবল করতে তদবিরের কালচার ভেঙে ফেলতে হবে এবং অর্থনৈতিক সেক্টরসমূহকে স্বচ্ছ করতে হবে। উপযুক্ত ব্যক্তিকে যথার্থ স্থানে বসাতে হবে।
অর্থকণ্ঠ : একজন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কি কি প্রত্যাশা করেন?
ড. মো. সবুর খান : একজন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট প্রত্যাশা গুড গভর্নেন্স বা সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সরকার দলীয়করণে বিশ্বাসী লোকদের পদায়ন না করে যথোপযুক্ত ব্যক্তিকে পদায়ন করবেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায় দলের দুঃসময়ে দলীয়করণে বিশ্বাসী বা দলকানা লোক পাশে থাকে না। তখন থাকে দলের সমালোচনা করা লোকজন। আমি যদি ড. আসিফ নজরুলের কথা বলি, আসিফ নজরুল বিএনপির সময় বিএনপির সমালোচনা করতেন। তখন বিএনপির লোক তাকে বিএনপি বিরোধী বলতেন। তিনি বাস্তববাদী ও যুক্তিবাদী মানুষ। একারণে ছাত্ররা তাকে বিশ্বাস করেছে। সমালোচনাকারীদের প্রতি হিংসাপরায়ণ না হয়ে তাদের বক্তব্য যুক্তিযুক্ত হলে গ্রহণ করতে হবে। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট প্রত্যাশা সমালোচনাকারীদের নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করা।
অর্থকণ্ঠ : বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আপনার ব্যবসাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
ড. মো. সবুর খান : প্রথমত আমি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়িক জীবন শুরু করি। পরবর্তীতে শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্ত হই। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি টাস্ক ফোর্সের সদস্য ছিলাম। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। অনেকে মনে করেছে আমি জোট সরকার হতে সুবিধা নিয়েছি। কিন্তু ভাগ্য ভালো আমি কোনো সুবিধা নেইনি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার এসে আমার ব্যবসা, ট্যাক্স ফাইল অনেককিছু তছনছ করেছে। এগুলো মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমি বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গ্রামীণ আইটি নামে ২০০৬ সালে একটি ব্যবসা শুরু করি। সরকারের চাপে ২০০৯ সালে সেটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসায়ীদের দলীয়করণের দৃষ্টিতে না দেখা। আর যারা রাজনীতির সুযোগ নেয়, তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। ব্যবসায়ীরা দেশ গঠনে কাজ করবেন। তারা হাজারও প্রতিকূলতার মাঝে কাজ করতে পারেন। গত ১৫ বছর হাজারও সমস্যার পর আমার ব্যবসার ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেছি। ঋণ গ্রহণ করতে না হয় সেটার দিকে লক্ষ্য রেখেছি। সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করি নাই, কোনো লিয়াজোঁতে আমি যাইনি। ব্যবসায়ী হিসেবে আমার পরিচয় হবে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখা। সারাবিশ্বে যদি আমার কোম্পানি ও শিক্ষাব্যবস্থা ছড়িয়ে দিতে পারি সেটা আমার সাফল্য। ব্যবসায়ী কিন্তু আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সফলতাকে প্রাধান্য দেয়।

অর্থকণ্ঠ : ক্রমবর্ধমান বিশ্বায়ন এবং বাজার স্যাচুরেশনের মুখে আপনার ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রতিযোগিতামূলক রাখার বিষয়টি আপনি কীভাবে নিশ্চিত করবেন?
ড. মো. সবুর খান : একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কিন্তু প্রতিযোগিতা ছাড়া ভাবা যায় না। কারণ প্রতিযোগিতা ছাড়া বলা যায় না কেউ প্রথম হবে। প্রতিযোগিতাকে একজন ব্যবসায়ী কিন্তু খারাপভাবে দেখে না। কারণ বৈশ্বিক যে সমস্যা- মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের মান, ইরানের নিষেধাজ্ঞা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মধুর ছিল। কিন্তু সেখানে ছন্দ-পতন বা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। যারা ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করে তারা সমস্যায় পড়তে পারে। তবে আশা করি পড়বে না। ব্যবসায়ীরা কিন্তু বিকল্প সুযোগ খুঁজে বের করে এবং সেটা পেয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা যদি আইনের শাসন পায় তাহলে ব্যবসা থেমে থাকবে না। আমি গত ৩৫ বছরে যে ব্যবসা করতে পারিনি তার চেয়ে বেশি ভালো ব্যবসা করেছি ১/১১ বা জরুরি অবস্থা জারির সময়। ঐ দুই বছর আমার ব্যবসা সফলতার শীর্ষে ছিল। কারণ আমি ব্যবসা করেছি কোনো হুমকি, চাঁদাবাজির শিকার হইনি। এক কথায় আমার কাজে কেউ ব্যাঘাত ঘটায়নি। কারও নিকট অহেতুক জবাবদিহি করতে হয়নি। ঐ দুই বছরে আমি যা করতে পেরেছি তা সমস্ত ব্যবসায়িক জীবনে করতে পারি নাই। ব্যবসায়ীরা ফ্ল্যাট বা সমতল ভূমি চায়। তাদের কাজে কেউ ব্যাঘাত না ঘটালে ব্যবসায়ীরা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সবসময় সচেষ্ট থাকে। আর এই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে পারলে ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অবদান অব্যাহত থাকবে । দেশে কোনো লোক বেকার থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কারণ উদ্যোক্তাদের যে কর্মপরিকল্পনা তাতে আমার তেমনই মনে হয়।
অর্থকণ্ঠ : আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলি কি কি? আপনি কীভাবে সেগুলি মোকাবিলার পরিকল্পনা করছেন?
ড. মো. সবুর খান : ব্যবসাসহ সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। এই সরকার বেশিদিন থাকলে ভঙ্গুর এই অবস্থা হতে উত্তরণ হতে সহায়তা করবে। তবে আমরা কিন্তু জানি না দুর্নীতিগ্রস্ত লোকগুলো কোথায় বসে আছে। অনেকে রাতারাতি খোলস পরিবর্তন করে ফেলেছে। আমি নিজেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। যারা আমাকে কিছুদিন আগেও হুমকি দিয়েছে তারা বলছে ভাই আমরা তো চাপে এমন করেছি। এই লোকগুলো এখনও আছে। এজন্য সঠিক মানুষ ও মুখোশ পরিহিত খারাপ মানুষকে বাছাই করতে হবে। তারপর সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষকে বসাতে হবে। এই মুখোশ পরা খারাপ লোকগুলো মানুষকে ফাঁদে ফেলে। তারা কিন্তু সুযোগ পেলে আবারও ফাঁদে ফেলবে। তারা কোনোদিন ভাল হবে না। এই জায়গাগুলোতে সমাজের ভালো মানুষদের স্থান দিয়ে সংস্কার করতে হবে।
অর্থকণ্ঠ : বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি এবং সেসব আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
ড. মো. সবুর খান : বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় যেসব সংস্থা রয়েছে তারা কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাবিত। আমার দৃষ্টিতে এখানে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। আমি যে কাজ করছি তা সবার জানা দরকার। এজন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে বা কর্তৃপক্ষকে সুশাসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এখানে কোনো লবিং তদবিরে কোনো ব্যবসা না হয় সেটার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এধরনের কিছু হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমে প্রতিষ্ঠানকে বুঝাতে হবে, তাদেরকে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে হলেও বোঝাতে হবে। তারপরও কথা না শুনলে রাস্তায় নামতে হবে। তাছাড়া ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা অনেকটা প্রভাবিত করে। যা প্রতিরোধ করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও উপকৃত হবে।
অর্থকষ্ঠ : বিগত সরকারের আমলে কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান ছিল। এখন সেগুলো কিভাবে পরিচালনা করা উচিত বলে মনে করেন?
ড. মো. সবুর খান : আমার মতে, দেশের সকল মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্পে যারা কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতিতে জড়িত ছিল, তাদের প্রতি আইনসম্মতভাবে সুযোগ দেয়া যেতে পারে, যাতে তারা তাদের অনৈতিকভাবে অর্জিত অর্থ ফেরত দেন এবং এই প্রক্রিয়ায় আইনগত জটিলতা এড়িয়ে যেতে পারেন। যদি তারা এই সুযোগ গ্রহণ না করেন, তবে অবশ্যই তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একদিকে মেগা প্রকল্পসমূহকে অব্যাহত রাখা এবং অন্যদিকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশের জনগণ ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে যে তারা যেকোনো ভালো কাজ বা মেগা প্রকল্পে অংশীদার হতে প্রস্তুত। তাই, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এই প্রকল্পগুলোকে চলমান রাখা জরুরি, কারণ এগুলো জনগণের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অর্থকণ্ঠ : আগামীর বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান? এ ব্যাপারে আপনার কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ জানতে চাইছি।
ড. মো. সবুর খান : প্রথমে আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হলো একটা অটোমোটেড সিস্টেম চালু করা। যেখানে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রই হবে তার সকল কাজের ডকুমেন্ট। যেটা দ্বারা সকল কাজকর্ম করতে সক্ষম হবে। এখানে যে নাম্বার থাকবে সেটা কোন ধরনের সেবা পেতে সহায়তা করবে এবং কার্ডটিতে তার সকল ভাল-খারাপ বিষয়টি নথিভুক্ত থাকবে। যাতে সহজে মানুষ লোকটি সম্পর্কে জানতে পারে। তার সোস্যাল এক্টিভিটিস থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সবকিছু লিপিবদ্ধ থাকবে। তাহলে সমাজে অনাচার, অবিচার শূন্যের কোটায় নেমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে এটা চালু থাকায় সেখানে কিন্তু মানুষকে সহজে শনাক্ত করা যায়। আমি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চাই। যারা বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কের পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে আমি এই রাষ্ট্র চাই না। এরা মুখোশ পরিহিত। সময়ের আবর্তনে খোলস পরিবর্তন করে। এরা সর্বদা ক্ষমতাসীন দলের হয়ে থাকে। কখনও বিরোধী দলের হয় না। এদেরকে শনাক্ত এবং সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। এরাই কিন্তু সবাইকে বিতর্কিত করে। হাসিনা সরকারকে বিতর্কিত করেছে যারা সবচেয়ে বেশি তোষামোদি করেছে। সবশেষে বলবো, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে যোগ্যতাসম্পন্ন লোককে যোগ্য স্থানে রাখতে হবে। তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করবো।