রকি আলিয়ান; নিউ ইয়র্কে তারুণ্যে উদ্দীপ্ত এক বাংলাদেশি আমেরিকান। বাংলাদেশি আমেরিকানদের দ্বিতীয় জেনারেশনের রকি আলিয়ান একদিকে যেমন বাংলাদেশ মেলার আয়োজক হিসেবে সংস্কৃতি ভুবনের স্টার, তেমনই উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী হিসেবেও বেশ আলোচিত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য ফার্নিচার কোম্পানি Star Furniture এর প্রেসিডেন্ট। স্টার ফার্নিচার ইতোমধ্যে আমেরিকার ফার্নিচার সেক্টরে ব্যাপক সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
রকির জন্ম ১৯৮৬ সালের ১২ নভেম্বর শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার আটপাড়ায়। তার পিতার নাম হাজী মো: আলী আকবর মাল এবং মা বেনু বেগম। রকি মাত্র ১১ বছর বয়সে আমেরিকায় আসেন। তিনি এখানে Vll গ্রেডে ভর্তি হন। ২০০৪ সালে তিনি City University of NY (CUNY) থেকে ফিজিক্সে এসোসিয়েটস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০১১ সালে Aircraft Operation (Pilot) হিসেবে যোগদানের লক্ষ্যে ডিগ্রি লাভ করেন। কঠিন এবং উন্নত এই পেশার জন্যে ডিগ্রি নিলেও তিনি একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেননি।
রকি আলিয়ান উদ্যমী ও পরিশ্রমী তিনি। বাল্যকাল থেকেই চটপটে ও কর্মপ্রিয়। তার বড় ভাই দুলাল হোসেন মাল ১৯৯০ সালে আমেরিকায় আসেন। তিনি এখানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। রকি ছাত্রাবস্থায় এই ফ্যামিলি বিজনেসের সাথে যুক্ত হন। এভাবে বিজনেসের সাথে জড়িত হবার সুবাদে তিনি কখনো চাকুরির কথা ভাবেননি। তার ভাইয়ের ফার্নিচার ব্যবসাও ছিল। এতে রকির ফার্নিচার ব্যবসা সম্পর্কেও বেশ ধারণা জন্মে।
রকি শুরু থেকেই আমেরিকান কালচারের পাশাপাশি নিজ দেশের শেকড় সংশ্লিষ্ট লালন করতেন। যখনই সুযোগ পেতেন তখনই বাংলাদেশের গান নিয়ে মেতে উঠতেন।
তিনি ২০১১ সালে আলাদাভাবে ফার্নিচার ব্যবসার উদ্যোগ নিলেন, নাম দিলেন Star Furniture। এ ধরনের ব্যবসার জন্যে যে বিষয়গুলো বেশি প্রয়োজন অর্থাৎ মানুষের সাথে সম্পর্ক এবং ভালো ব্যবহার তা রকির করায়ত্ত। এ জন্যে তার সাফল্য আসে অল্প দিনের মধ্যেই।
২০১৪ সালে রকি বিয়ে করেন বাংলাদেশি আমেরিকান শাহানা সুলতানা মুক্তাকে। মুক্তা তার স্কুল ফ্রেন্ড। রকির ফার্নিচার ব্যবসার সাথে বড় ভাইও যুক্ত ছিলেন। নিউ ইয়র্কে স্টার ফার্নিচার বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে তাদের ৫টি আউটলেট।
নিজ জন্মভূমির শেকড় সত্তাকে আমেরিকাতেও বিস্তৃত করার লক্ষ্যেই রকি আলিয়ান ২০১৫ থেকে শুরু করেন ‘ঈদ আনন্দ রঙ’ নামক একটি জনপ্রিয় স্টেজ অনুষ্ঠান। গ্রন্থণ, উপস্থাপনা এবং পরিচালনা সবই তাঁর একক কৃতিত্ব। সৃজনশীল রকি আলিয়ান বলতে গেলে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ভুবনের উজ্জ্বল স্টার। প্রতি রোজার ঈদের অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের পর তিনি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। তিনি এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা ধাঁচের। অন্যরা যেখানে নামি-দামি সংগীত তারকা নিয়ে অনুষ্ঠান করেন সেখানে তার ভূমিকা হচ্ছে ব্যতিক্রমী। তিনি আমেরিকাতেই যে সকল বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী ভালো গান করেন তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। তার অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা এমন যে, ৫০০ জনের হলরুমের কোথাও কোনো সিট অবশিষ্ট থাকে না। রকি বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান শুধু মিলন মেলাই নয়, সংগীত শিল্পীদেরও অনুপ্রাণিত করে। আবার প্রবাসে বাংলাদেশের কালচারকেও আলোকিত করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশিদের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, আধুনিক, হাছনরাজার গান, লালনের গান শুধু যে আমাদেরকেই আনন্দ দেয় তাই নয় এসব গানের কথা, ভাষা ও সুর অন্যান্য দেশের মানুষদের মনেও সাড়া জাগায়। তিনি বলেন, আগে আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে খুব সময় দিতেন না। কিন্তু এখন তারা বেশ আগ্রহী। রকি জানান, তার ‘ঈদ আনন্দ রঙ’ দেখার জন্যে অথবা উপভোগ করার জন্যে আগে থেকেই বুকিং দেয়া শুরু হয়।
রকি আলিয়ান রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাথেও সম্পৃক্ত। তিনি ২০১৭ সালে Dream Real Estate Development INC. প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এর প্রেসিডেন্ট। গত ৫ বছরে তিনি অনেক বাড়ি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন। তিনি মনে করেন, এই ব্যবসার মাধ্যমে যারা এখানে গৃহহীন তাদের সহায়তা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ড্রিম রিয়েল এস্টেট আমেরিকার আবাসন খাতে ইতোমধ্যেই প্রশংসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে।
রকি আলিয়ান মেধাবী উপস্থাপক। তার গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা বেশ নান্দনিক। তিনি নিজ দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বভান্ডারে তুলে দিচ্ছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটিরও অধিক। প্রতিটি মানুষই সিনেমাসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রতি আগ্রহী। কিন্তু মানুষকে কাছে টানার মতো শিল্প-সংস্কৃতি সেভাবে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারছে না বলেই দর্শক কমে যাচ্ছে। রকি বলেন, সুযোগ পেলে তিনি দেশের মুভি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণকে তিনি এ সময়কালের শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরাও অসাধ্য সাধন করতে পারি।
রকি আলিয়ান নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান লায়নস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দেশে ঘুস-দুর্নীতি কমানোর লক্ষ্যে তিনি পুলিশের সংখ্যা ও তাদের বেতন বৃদ্ধির মতামত রাখেন। তিনি বলেন, তবে পুলিশকে হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, সৎ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি প্রত্যাশা করেন দেশে যথার্থ বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে মানবিক বাংলাদেশ। অর্থকণ্ঠ প্রতিবেদক